প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস
মাদ্রাসা শিক্ষায় প্রথম প্রতিষ্ঠান ছিল সাফা পর্বতের পাদদেশে যায়েদ—বিন—আরকামের বাড়িতে — যেখানে স্বয়ং মুহাম্মাদ (সা.) ছিলেন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী ছিলেন তার কয়েকজন অনুসারী নওমুসলিম। হিজরতের পর মদিনায় মসজিদে নববি—র পূর্বপাশে স্থাপিত হয় মাদ্রাসা আহলে সুফ্ফা। শিক্ষক ছিলেন উবাদা—ইবন সামিত আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন আবু হুরাইরা , মুয়াজ—ইবন জবল, গিফারি প্রমুখ। ১৭৮০ সালে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে আলিয়া ধারার মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার শুভ সূচনা হয়। পর্যায়ক্রমে অবিভক্ত বাংলা, বিহার, আসাম ও ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মাদ্রাসা শিক্ষা সম্প্রসারিত হতে থাকে। এই ধারাবাহিকতায় উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, ইসলামি চিন্তাবিদ “আল্লামা আবু নাঈম মুহাম্মদ নূরুল আমিন আতিকী (রহ.) ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন “খলিফারহাট হামেদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা”। এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে নোয়াখালী জেলার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। এটি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালকবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দ, শিক্ষার্থীদের ও সর্বোপরি এলাকাবাসীর সমন্বিত প্রচেষ্টার ফল। এলাকাবাসীর সেবার মনোভাব নিয়ে মান সম্পন্ন শিক্ষা প্রসারে এবং কৃতিত্বপূর্ণ ফল অর্জন করে এই প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে একটি স্থান করে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সার্বিক ক্ষেত্রে সফলতার জন্য মানুষের মাঝে এক ধরনের চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় তাঁরা তাঁদের কোমলমতি ছেলে মেয়েদের এই প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করাতে যথেষ্ট আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। প্রতিষ্ঠানের সাফল্যে অভিভাকগণের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ে বেশ প্রসংশনীয় অবদান রাখছে। সবকিছুর মূলে রয়েছে প্রতিষ্ঠানের অটুট শৃঙ্খলা, শিক্ষকগণের একাগ্রতা, শিক্ষক—শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণের মধ্যে সমন্বয় সাধন। শিক্ষার্থীদেরকে উপযুক্তভাবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমাদের রয়েছে বিরামহীন চেষ্টা ও পরিকল্পনা।
প্রধান উপদেষ্টার বাণী
গৌরবদীপ্ত, জ্ঞান—গরিমায় সমৃদ্ধ, আদর্শ মানুষ গড়ার অনন্য কারখানা খলিফারহাট হামেদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা । এর প্রতিষ্ঠাতা ও স্বপ্নদ্রষ্টা উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, ইসলামি চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, হৃদয়গ্রাহী আল—কুরআন তিলাওয়াতকারী, ইসলাম প্রচারক, বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের সাবেক খতিব আল্লামা আবু নাঈম মুহাম্মদ নূরুল আমিন আতিকী (রহ.)। দ্বীনের এই সংগ্রামী বীরপুরুষ, সিংহদিল আলেম গড়ার কারিগর ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ফেব্রুয়ারী ইন্তেকাল করেন। ‘‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহিরাজেউন’’। জান্নাতুল ফেরদাউসই হোক তাঁর চূড়ান্ত ঠিকানা। আমিন, ছুম্মা আমিন।
মহান আল্লাহ তা’য়ালা এদেশের হাজার/লক্ষ মুসলিম নর—নারীদের হৃদয়ের স্পন্দন, মরহুম আতিকী সাহেবের প্রতিষ্ঠিত, মরহুম হাম্মাদুর রহমান আতিকীর স্মৃতি পেলবিত, মাও. মওদুদুর রহমান আতিকীর শুভকামনায় উজ্জীবিত, ঈমানে—আমলে, মননে, নেতৃত্বে ও আত্মমানবতার সেবায় পরিচিত, চরিত্রে—মাধুর্যে সমৃদ্ধ এবং জান্নাতের পথে আগোয়ান কন্ঠে যাদের আল্লাহ ও রাসূলের (স.) গুণগান, মানবতার মুক্তির জয়গানে মুখরিত, সত্য—ন্যায়ের, ইহসান ও ইনসাফের সুবাসে সুবাসিত অত্র দ্বীনি প্রতিষ্ঠানটির উন্নতি অগ্রগতি ও সুনাম কামনা করছি কিয়ামতের শেষ লগ্ন পর্যন্ত।
আল্লাহ পাক সকল প্রচেষ্টা ও প্রয়াস কবুল করুন এবং আখিরাতে আমাদের সকলের নাজাতের উসীলা হিসাবে এই মাদ্রাসাখানি কবুল করুন। আমিন।
সাজ্জাদুর রহমান আতিকী
প্রধান উপদেষ্টা
অধ্যক্ষের বাণী
“জ্ঞানই আলো” সেই আলোতে ভোরের সূর্যের মতো আলোকিত হতে হলে সর্বাগ্রে যে জিনিসটি আবশ্যক তাহলো সুশিক্ষা। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা বস্তু তান্ত্রিক সভ্যতার বিকাশে সহায়ক হলেও নৈতিক উন্নতি, মানুষিক শান্তি এবং পরকালীন মুক্তির দিক নির্দেশনা প্রদানে চুড়ান্তভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই ওহি ভিত্তিক আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা অপরিহার্য, যা পার্থিব সফলতার পাশাপাশি পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত করবে। এই চিন্তাকে সামনে রেখে উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, ইসলামি চিন্তাবিদ “আল্লামা আবু নাঈম মুহাম্মদ নূরুল আমিন আতিকী (রহ.) ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন “খলিফারহাট হামেদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা”।
বস্তু সভ্যতার আদলে প্রণীত, প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার ফলে জাতি হিসেবে আমরা আমাদের আপন সত্তা হারিয়ে ফেলেছি। মুসলিম উম্মার এই ক্লান্তিলগ্নে প্রয়োজন একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের। অপরদিকে অভিভাবকগণ মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে সন্তানদের জন্য যুগোপযোগী মনে করতে পারছেন না বিধায় তা থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করছেন। অথচ কুরআন—সুন্নাহই হচ্ছে বিজ্ঞানের সকল আবিস্কারের তত্ত্ব ও তথ্যের ভিত্তি। আধুনিক সভ্যতা ও বিজ্ঞানের স্থপতি ইবনে সিনা, যাবের ইবনে হাইয়ান, ইমাম রাজী, আল—খাওয়ারেজমী প্রমুখ মনীষীগণ ওহী ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থারই ফসল। তাই প্রচলিত মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা কে গতানুগতিক ধারা থেকে আধুনিক ও উন্নত বিজ্ঞান সম্মত যুগোপযোগী ধারায় রূপদান এবং এই শিক্ষায় শিক্ষিতদের কুরআন—সুন্নাহে সুদক্ষ চলমান শতাব্দীর পথ প্রদর্শক হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে অত্র মাদ্রাসা চলমান শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উপযোগী যোগ্য নাগরিক তৈরিতে সক্ষম হবে, ইনশাআল্লাহ।
মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম শামীম
অধ্যক্ষ